মহসিন কবির:আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে দলের রাজনীতি কী দিকে এগোবে—এই প্রশ্ন এখন দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার বিষয়। দলটির অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী ইতিমধ্যে অন্য রাজনৈতিক শিবিরে চলে গেছেন, কেউ কেউ রাজনীতির হাত থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আবার কেউ দেশের বাইরে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে ঘৃণা এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবজ্ঞাসূচক মন্তব্যও ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রতীয়মান হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি নৌকা না থাকে, তাহলে সেই নৌকা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে কীভাবে? দলের নেত্রী হত্যার শাস্তি পাওয়ায় অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশা গেড়েছে, এবং তৃণমূলের বড় অংশ মনে করছে বর্তমান পরিস্থিতিতে সহজে পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়।
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গভীর সংকটের সূচনা করেছে। পাশাপাশি ভারতের অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, কারণ তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিচ্ছে। এতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে ভারত আগামিতে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করবে এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনো রকম খেলাভাবে অংশগ্রহণ করতে চাইবে না।
আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা দেশে না থাকায় দল সংগঠিত হতে পারছে না। যারা দেশের মাটিতে আছেন, তাদের বেশিরভাগই মামলার মুখে, কারাগারে বা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। ফলে দলের নেতৃত্বহীনতা দিন দিন গভীর হচ্ছে এবং রাজনীতি সংকুচিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে, আওয়ামীপন্থি পেশাজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিক্রিয়াও স্তব্ধ এবং বিচ্ছিন্ন।
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চুপ থাকছেন। ভোট ব্যাংকের ভবিষ্যতেও অনিশ্চয়তা প্রবল—অনেকেই পারিবারিক ও সম্পদের সুরক্ষার স্বার্থে ক্ষমতাসীন দল বা অন্য কোনো দলের দিকে ঝুঁকছেন, তবে দলের নিবেদিত কর্মীরা এখনো একঝাঁক দৃষ্টিভঙ্গির অপেক্ষায় রয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “শেখ হাসিনার পুনরুজ্জীবনের আশা কমই। তবে পরিবার ভেঙে যাবে নাকি আবার ফিরে আসবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।” তিনি আরও বলেন, যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের আচরণই নির্ধারণ করবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থান। ভালো রাজনীতি করলে দল ফিরবে না, ভুল করলে জনগণ তাদের ফিরে আনবে।
অন্য বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, শেখ হাসিনার উচিত ছিল নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে পদত্যাগ করা। এখন দলের নেতাকর্মীদের হতাশা প্রকট, এবং আইনগত ও বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সংকুচিত হয়েছে।
সার্বিকভাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সহজে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তবে ক্ষমতাসীন দলের ভুল পদক্ষেপ এলে, বাংলাদেশি জনগণ দ্রুতই আওয়ামী লীগের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং তারা আবার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।