প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০২৫, ০৬:৪৮ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আখাউড়া ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে খুন, স্ত্রী জান্নাত আক্তার আক্তার কে গ্রেফতার করেছে আখাউড়া থানা পুলিশ।

মোঃ এনামুল হক আরিফ ব্যুরো চিফ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।
সহযোগিতা মোঃ জানে আলম রনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মেহদি হাসান (২৭) নামে এক যুবককে হত্যা করেছে জান্নাত আক্তার (১৮) নামে এক নববধূ। পুলিশের দাবি, দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীকে বালিশ চাপা ও গলাটিপে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে ওই নববধূ।

শুক্রবার দিবাগত গভীররাতে আখাউড়া পৌরশহরের মসজিদ পাড়া  এলাকায়  এ ঘটনা ঘটে।

তবে নিহত মেহদি হাসানের পরিবারের দাবি, পরকীয়ার জেরেই স্বামীকে পরিকল্পিত হত্যা করেছে নববিবাহিতা স্ত্রী জান্নাত আক্তার। এ ঘটনায় নববধূ জান্নাত আক্তারকে গ্রেফতার করেছে আখাউড়া থানা পুলিশ।

আখাউড়া পৌরসভা মসজিদ পাড়া ইসমাইল সর্দারের বসত বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন মেহেদী হাসান(২৬), পিতা-মৃত জলফু মিয়া, সাং-আখাউড়া মসজিদ পাড়া, থানা-আখাউড়া, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

মোছাঃ জান্নাত আক্তার(১৮), স্বামী-মেহেদী হাসান, পিতা-মোঃ আল আমিন মিয়া, মাতা-মোছাঃ নার্গিস আক্তার, সাং-চন্দনসার (কুলিবাগান), থানা-আখাউড়া, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে (শুক্রবার) মেহদি হাসানের সঙ্গে আখাউড়া পৌরশহরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা জান্নাত আক্তারের পারিবারিকভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর কয়েকদিন ধরেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও বাগবিতণ্ডার চলে আসছিলো ।

পুলিশের হেফাজতে থাকা নববধূ জান্নাত আক্তার জানান, অসুস্থতার কথা বলে শুক্রবার বিকেলে স্বামীকে দিয়েই ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ আনান তিনি। রাতে মেহদি বাসায় ফিরলে কোকের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন। এরপর অচেতন হলে গলাটিপে ও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ধরলে স্বামীর মৃত্যু হয়।

তবে মেহদীর বড় ভাই আবু কালাম ও মা বকুল আক্তারের দাবি, পরকীয়ার জেরেই নববধূ জান্নাত তার প্রেমিককে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মেহদিকে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি জানিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য যে, গত ০৯/০৫/২০২৫ ইংরেজি তারিখ মেহেদী হাসানের সাথে ঘাতক স্ত্রী মোছাঃ জান্নাত আক্তার এর সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয়। মেহেদী হাসান আখাউড়া সড়ক বাজারের সানি ফার্মেসীতে চাকুরী করে। গত ১৬/০৫/২০২৫ ইং তারিখ রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় মেহেদী হাসান(২৬) ফার্মেসী থেকে ঘরে ফিরে মা সহ একত্রে রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে ঘুমিয়ে যায়। ১৭/০৫/২০২৫ ইং তারিখ, ভোর রাত অনুমান  ৪টা থেকে ৫ ঘটিকার সময় ঘাতক মোছাঃ জান্নাত আক্তার বাড়ির মালিক সহ ভিকটিমের মাকে ডেকে জানায় , মেহেদীকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন খুন করে পালিয়ে গেছে। তাৎক্ষনিক ভাবে মেহেদী হাসানকে অটো যোগে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার সময় ঘরে থাকা একমাত্র লোক ঘাতক মোছাঃ জান্নাত আক্তার খুন হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে একেক সময় একেক ধরণের কথা বলায় তার প্রতি সকলের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া ঘাতক মোছাঃ জান্নাত আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে, একপর্যায়ে স্বামীকে হত্যা করেছে মর্মে স্বীকার করে। থানা পুলিশ ঘাতক মোছাঃ জান্নাত আক্তারকে আরও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মেহেদী হাসান বিয়ের পর থেকে ঘাতক মোছাঃ জান্নাত আক্তারের সাথে একাধিকবার সহবাস করতে চাওয়ায় মেহেদী হাসান এর প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হইয়া ঘটনার তারিখ রাতে পরিকল্পিত ভাবে কোক এর সাথে ০৬ টি ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ায়, কিছুক্ষণ পর  মেহেদী হাসান'কে বালিশ দিয়ে মুখে চাপা দিয়া ধরলে, ধ্বস্তাধস্তি করে খাট থেকে নিচে পড়ে যায়। এরপর ঘাতক জান্নাত আক্তার মেহেদী হাসান'কে বালিশ দিয়ে মুখে চাপা দিয়া ধরিয়া শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করে। মেহেদী হাসানের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বাদীহয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করিলে আখাউড়া থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়। এবং খুনি জান্নাত আক্তার এর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে, বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আখাউড়া থানার ওসি মোঃ ছমিউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর জান্নাত আক্তার তার দোষ স্বীকার করেছেন। তার স্বামী মেহেদি হাসান বিয়ের পর শারীরিক নির্যাতন করতো। নির্যাতন থেকে বাঁচতে থাকে দিয়েই কৌশলে ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ নিয়ে আসেন জান্নাত। পরে কোকের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে বালিশ চাপা ও গলাটিপে তাকে হত্যা করেন। মেহেদী হাসানের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বাদীহয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করিলে গ্রেফতারকৃত জান্নাতের বিরুদ্ধে  হত্যা মামলা রুজু করে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়