প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:১৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে কিমের স্পর্শ করা সবকিছু সতর্কভাবে পরিষ্কার করল নিরাপত্তারক্ষীরা

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন খুবই কম বিদেশ সফরে যান। আর বিদেশে গেলেও তিনি বিমানের বদলে নির্ভর করেন বিশেষ সাঁজোয়া ট্রেনের ওপর। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি—চীনে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিতে সেই সুরক্ষিত ট্রেনেই তিনি সেখানে পৌঁছান।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ব্যক্তিগত স্টাফরা বৈঠকের কক্ষটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিষ্কার করেন। চায়ের কাপ, টেবিল, চেয়ারের হাতল যে কোনো জিনিস কিম স্পর্শ করেছেন বলে ধারণা করা হয়, তা বিশেষভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয় যেন কোনো ধরণের চিহ্ন না থাকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সাধারণত কিম জং উন খুব কমই নিজের দেশের বাইরে সফরে যান। এমনকি দেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতির ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায় না; রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কেবল কিছু স্থিরচিত্র প্রকাশ করা হয়। বরাবরের মতোই নিজের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় কিম অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, আর এ ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে ক্রেমলিনের প্রতিবেদক আলেক্সান্দার ইউনাশেভ একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে কিম জং উনের ব্যবহৃত বা ছোঁয়া সবকিছু অত্যন্ত সতর্কভাবে পরিষ্কার করছেন তার নিরাপত্তাকর্মীরা। ভিডিওতে ইউনাশেভ বলেন, "বৈঠকের পর ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার স্টাফরা এমনভাবে সবকিছু মুছে দিচ্ছেন, যেন তিনি কখনও এই কক্ষে উপস্থিতই ছিলেন না।"

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অতিরিক্ত নিরাপত্তার পেছনে রয়েছে বিদেশি গুপ্তচরদের নজর এড়িয়ে চলার কৌশল। কেবল কিম যে স্থান বা জিনিস স্পর্শ করেছেন তা-ই নয়, তার ব্যক্তিগত বিষয় গোপন রাখতেই নেওয়া হয় আরও চমকপ্রদ ব্যবস্থা নিজের ব্যক্তিগত টয়লেট পর্যন্ত সঙ্গে করে আনেন কিম জং উন।

এটাই প্রথম নয়, আগের বিদেশ সফরগুলোতেও কিমের ব্যক্তিগত টয়লেট বহন করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে জাপানি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, কিমের স্বাস্থ্যের কোনো তথ্য যেন বাইরে না যায়, সেজন্যই এই ধরনের কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ববিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাডেন জানান, কিম জং উনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শুধু ব্যক্তিগত টয়লেটই নয়, তার ব্যবহৃত আবর্জনা, বর্জ্য কিংবা সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পর্যন্ত যাতে কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার, এমনকি মিত্র দেশের গোয়েন্দাদের হাতেও না পড়ে তা নিশ্চিত করতেই এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শুধু কিমের ব্যবহারের পর নয়, তার কোনো জিনিস ব্যবহার করার আগেও সতর্কভাবে সেগুলো পরিষ্কার করেন তার নিরাপত্তা সদস্যরা। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে বৈঠকের আগে কিমের নিরাপত্তাকর্মীরা চেয়ারে এবং ডেস্কে জীবাণুনাশক স্প্রে করে ভালোভাবে পরিষ্কার করেছিলেন। এমনকি ২০২৩ সালে পুতিনের সঙ্গে আরেকটি শীর্ষ বৈঠকেও দেখা যায়, কিমের টিম আগেভাগেই চেয়ার-টেবিলসহ পুরো পরিবেশ সতর্কতার সঙ্গে জীবাণুমুক্ত করে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়