সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, মামলার ৬ আসামির যাবজ্জীবন সাজাও বহাল রাখা হয়েছে।
আজ সোমবার (২ জুন) বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বলা হয়—
“আমরা নিম্ন আদালতের সাক্ষ্য, প্রমাণ এবং দলিলাদি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হলো এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করা হলো।”
রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।
রায় ঘোষণার পর শারমিন ফেরদৌস বলেন,
“সত্যের জয় হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এ রায় কার্যকর হোক।”
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এম আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিম উদ্দিন সরকার
আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও সারওয়ার আহমেদ
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এই মামলাকে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তিযোগ্য’ বিবেচনা করে দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিলে, ২৩ এপ্রিল শুনানি শুরু হয় এবং ২৯ মে তা শেষ হয়। এরপর ২ জুন রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় মেজর সিনহাকে। তিনি মহামারিকালে তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডটি দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করে।
পরে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। র্যাব তদন্ত করে প্রতিবেদনে জানায়, ওসি প্রদীপ মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ‘বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে’ অর্থের বিনিময়ে খুন করতেন।
তদন্তে আরও উঠে আসে, সিনহা ও তার সঙ্গীরা ওসি প্রদীপের টেকনাফে চালানো নিপীড়নের কাহিনী জানতে পারায়, তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। প্রদীপের নির্দেশে লিয়াকত গুলি করেন এবং অন্যান্য আসামিরা সহযোগিতা করেন।
২০২১ সালের ২৭ জুন: কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল বিচার শুরু করেন
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি: রায়ে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড, এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়
বাকি ৭ জন (৪ পুলিশ ও ৩ এপিবিএন সদস্য) বেকসুর খালাস পান
পরে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয় ও আসামিরা আপিল করেন