শিশু-কিশোরদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সতর্কতা। অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে আইন করেছে—১৬ বছরের নিচে কেউ আর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা স্ন্যাপচ্যাটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। অনুরূপ পদক্ষেপের পথে এগোচ্ছে আরও দেশ। এদিকে নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, দিনে ৩০ মিনিটের বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করলে শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।
৮ হাজারের বেশি শিশুকে নিয়ে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট ও যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা এই পরীক্ষা চালান। তাঁরা স্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস আর অ্যাটেনশন-ডেফিসিট/হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি)–সম্পর্কিত উপসর্গের সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজেছেন।
৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মোট ৮,৩২৪ শিশুকে চার বছর অনুসরণ করে দেখা যায়—যে শিশু ৯ বছর বয়সে দিনে মাত্র ৩০ মিনিট স্ক্রিনে সময় দিত, সে ১৩ বছর বয়সে গিয়ে একই স্ক্রিনে কাটাচ্ছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
ফলাফলে স্পষ্ট হয়, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, ফেসবুক বা এক্স–জাতীয় প্ল্যাটফর্মে বেশি সময় কাটানো শিশুদের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে অমনোযোগিতার লক্ষণ। যদিও টিভি দেখা বা ভিডিও গেম খেলার ক্ষেত্রে এমন প্রভাব পাওয়া যায়নি—এ তথ্য মিলেছে পিয়ার-রিভিউড জার্নাল Pediatrics Open Science-এ প্রকাশিত গবেষণায়।
গবেষকেরা আরও জানান, বেশির ভাগ প্ল্যাটফর্মের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৩ হলেও, ৯ বছর বয়সেই শিশুরা দৈনিক প্রায় আধাঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে—১৩ বছরে যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে আড়াই ঘণ্টা।
ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক টরকেল ক্লিংবার্গ বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে—বিশেষভাবে সোশ্যাল মিডিয়াই শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে।” তাঁর মতে, বার্তা ও নোটিফিকেশনের ধাক্কায় মনোযোগ বারবার বিঘ্নিত হয়; এমনকি ‘নোটিফিকেশন এসেছে কি না’—এই ভাবনাও মনোযোগ সরিয়ে দেয়।
গবেষণা বলছে, পারিবারিক আর্থসামাজিক অবস্থা বা এডিএইচডির জিনগত প্রবণতা—কোনোটিই এই প্রভাব বদলায়নি। আবার যেসব শিশুর আগে থেকেই মনোযোগ কম ছিল, তারা পরবর্তীতে বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে শুরু করেনি—অর্থাৎ উপসর্গ নয়, বরং ব্যবহারের ফলেই মনোযোগ কমছে।
হাইপার অ্যাকটিভ বা আবেগপ্রবণ আচরণ বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া না গেলেও, গবেষকেরা মনে করছেন—ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রভাব সামান্য হলেও বৃহত্তর জনসংখ্যায় এর ফল হতে পারে উল্লেখযোগ্য।