মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম বুলু,
রিপোর্টার,
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলি ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামে মাদকাসক্ত জামাই এর ছুরিকাঘাতে চাচা শ্বশুর খুন হয়েছেন।এই ঘটনায় মারাত্বক আহত হয়েছেন ছোট শ্যালক আব্দুল্লাহ(২৭)।
আজ ৮ মে ভোর ৪:৩০ থেকে ৫:০০টার মধ্যে গাড়াবাড়িয়া গ্রামে নিহতের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত ইলিয়াস হোসেন (৪২)গাংনী উপজেলার কাথুলি ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত নেককার আলীর ছেলে।এ ঘটনায় আহত আব্দুল্লাহ (২৭) একই পরিবারের নিহতের বড় ভাই মৃত বাসার আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুর গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত বাসার হুজুরের মেজো মেয়ে সালমা খাতুনের সাথে ৮ বছর আগে একই উপজেলার ৬ নম্বর ষোল টাকা ইউনিয়নের, ষোল টাকা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য, ময়নালের ছেলে সবুজ(২৫) এর সাথে বিয়ে হয়।
ঘাতক সবুজের শ্যালক আব্দুল্লাহ জানায়, বোনের স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ায় টাকা চেয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করে তার বোনকে কয়েক মাস আগে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। মাদকাসক্ত হওয়ায় তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ লেগেই থাকতো। নিত্য কলহের কারণে বাধ্য হয়ে বোন তার বাবার বাড়ি চলে আসে। কয়েকবার স্বামীর বাড়ি থেকে লোকজন সালমাকে নিতে আসলেও সে তার শ্বশুরবাড়ি যেতে অমত পোষণ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী সবুজ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে "আমার স্ত্রী আমার কাছে না আসলে, আর কারো হাতে দেবো না ।"
সেই প্রতিজ্ঞা পূরণে আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪:৩০ এর দিকে শ্বশুরবাড়িতে আসে জামাই সবুজ। স্ত্রী সালমার কাছে পানি পান করতে চাইলে সালমা পানি নিয়ে আসা মাত্রই সবুজ তার গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করতে উদ্যত হয়। এতে সালমা স্বজোরে চিৎকার করে।ছোট ভাই আব্দুল্লাহ বোনকে রক্ষা করতে এলে সবুজ একই ছুরি দিয়ে তার বুকের পাশে উপূর্যপুরী আঘাত করে। এমতাবস্থায় যন্ত্রণায় কাতর আব্দুল্লাহ চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
চিৎকার শুনে আব্দুল্লাহকে রক্ষা করবার জন্য তার আপন চাচা ছুটে এলে তাকেও সবুজ একই ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে এবং একসময় পেটে আঘাত করে তার পেটের ভুড়ি বের করে দেয়। ইলিয়াস,আব্দুল্লাহ ও সালমার গগন বিদারী চিৎকারে প্রতিবেশীরা সাহায্যের জন্য ছুটে এসে দেখে ইলিয়াসের পেট চিরে ভুড়ি বেরিয়ে গেছে।তারা সকলে ইলিয়াস হোসেন ও আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ইলিয়াস হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মুমূর্ষু আব্দুল্লাহ জেনারেল হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কা জনক।
এদিকে খুনি সবুজকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে আটকে রাখে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ধলা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ,এস আই পিন্টু মন্ডল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তিনি গাংনী থানা পুলিশকে খবর দেন। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বাণী ইসরাইল ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ওদিকে সেনাবাহিনীর একটি টিমও সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং খুনি সবুজকে উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খুনি সবুজের সালমা ছাড়াও আরো দুটি স্ত্রী ছিল।একজন জোড়পুকুরের ও আরেকজন করমদি এলাকার। তার প্রথম স্ত্রীর একটি ছেলে সন্তান এবং বর্তমান স্ত্রী সালমার ও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রীকে সে ডিভোর্স দেয় এবং দ্বিতীয় স্ত্রী মাদকাসক্তর কারণে স্বেচ্ছায় ডিভোর্স নেয়।