শেষ শ্রাবণের প্রখর রোদ পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম নওগাঁ জেলার সাপাহারের লক্ষ্মীপুর গ্রামে সরু, ধুলোমাখা আঞ্চলিক সড়ক ধরে। এখন আমনের বীজ বোনার মৌসুম, তাই চারদিকেই একটাই অপেক্ষা: বৃষ্টি। আকাশ ভারী, বাতাসে আর্দ্রতা মনে হচ্ছিল যেকোনো মুহূর্তে ঝরে পড়বে বহু প্রতীক্ষিত পানি। কিন্তু সে আশাও মিলিয়ে গেল গুমোট বাতাসের ভেতরেই।
আমের মৌসুম তখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। গ্রামের ঢোকার মুখেই দেখা হলো বিজিয়ান মুর্মুর সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই, সাঁওতাল এই নারী আক্ষেপের সুরে বললেন, “গরমটা এখন বড় বেশি লাগছে। আগে পাখার বাতাসেই ঘুমিয়ে পড়তাম, এখন ফ্যান আছে, তাও গরম কমে না। বৃষ্টিও মনে হয় আগের মতো পড়ে না।”
এই লক্ষ্মীপুর গ্রাম আর আশেপাশের জমিগুলো একসময় ছিল ধানের ভাণ্ডার। ছোটবেলায় ধানচাষ দেখেছেন বিজিয়ান নিজেও— বাবার সঙ্গে জমিতে কাজ করতেন। এখন সে ছবি শুধুই স্মৃতি। পুরো সাপাহার জুড়ে রুক্ষ মাটির ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি আমগাছ।
বিজিয়ান বলেন,“ মাটির নিচে এখন আর পানি নাই। বৃষ্টিও কমে গেছে। ধানে আগের মতো লাভ নাই। তাই সবাই এখন আম চাষ করে।”
আমচাষ এই অঞ্চলের অনেক মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তবে বিজিয়ানের মতো প্রান্তিক কৃষকদের জীবনে সেই পরিবর্তন খুব একটা ছোঁয়াচ পর্যন্ত লাগেনি। তাঁদের জীবন এখনও ধান ও সবজির চাষের ওপর নির্ভরশীল, আর সেই চাষ আজ চরম সংকটে। সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে পানি।
উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় বছরের পর বছর ধরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে, শুকনো মৌসুম এলেই শুরু হয় সুপেয় ও সেচের পানির জন্য হাহাকার। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বৃষ্টিপাতও কমে যাচ্ছে দিনে দিনে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসহনীয় গরম। ২০২৫ সালের জুন মাসে সারাদেশে গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে, তবে উত্তরাঞ্চলে সেই ঘাটতি আরও স্পষ্ট।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই চিত্র স্পষ্টভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে, আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে আবহাওয়া, মাটি ও পানির উৎসে। তবে এসব প্রযুক্তিগত শব্দ বিজিয়ানদের কাছে অচেনা। তবুও তিনি বলেন, “কিছু একটা গড়বড় হইতেছে বইলেই মনে হয়। আগের মতন আর কিছুই নাই।”
এই অঞ্চলজুড়ে নওগাঁর সাপাহার, নিয়ামতপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী আর তানোর কয়েকদিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকৃতির এই বদলে যাওয়া রূপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কৃষক, দিনমজুর, আমচাষি থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবাই বলছেন আগের মতো আর কিছুই নেই। তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতায় বলছেন, প্রকৃতির বিরূপ আচরণের সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছে।
দেশের নানা প্রান্তে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেসব অঞ্চল এই দেশকে খাদ্য সরবরাহ করে, সেই উত্তর জনপদ এখনো সেই প্রস্তুতির বাইরে রয়ে গেছে এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, যিনি এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি, খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন, বলেন:
“জলবায়ু পরিবর্তন বললেই আমরা উপকূলের কথাই ভাবি। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের জটিল বাস্তবতা ও বৈচিত্র্যের দিকে নজর দেই না। অথচ এই অঞ্চলেই উৎপন্ন হয় দেশের বড় একটি অংশের খাদ্য। যদি এখানকার উৎপাদনে আঘাত আসে, তাহলে ক্ষতি হবে পুরো দেশেরই।”
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চল ইতিমধ্যে খরা ও পানিসংকটে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।
“জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ আরও বাড়লে, আর পানি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা চলতে থাকলে, উত্তরাঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে যেতে পারে।”
এই অশনি সঙ্কেত শুধু বিজিয়ানদের জীবনের কষ্ট বাড়ায় না—এটা পুরো দেশের জন্যই একটি গভীর সতর্কবার্তা।
?️ উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি কমছে, চাপে কৃষি ও পানির উৎস:
চলতি বছর জুন মাসে দেশে গড়ে ২০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ এই মাসের অর্ধেক জুড়েই বর্ষাকালের সূচনাপর্ব, আষাঢ়। স্বাভাবিকভাবে এই সময়ে বৃষ্টির যে প্রবাহ থাকার কথা, তার ঘাটতি উদ্বেগজনক। যদিও জুলাই মাসে সামগ্রিকভাবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে, উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে তা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৮ মিলিমিটার কম। ব্যতিক্রম শুধু রাজশাহী—সেখানে জুলাইয়ে গড়ের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা ধারাবাহিক নয়; বরং দীর্ঘমেয়াদে উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টির হার কমে যাচ্ছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে ১৯৪৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়কালের বৃষ্টিপাতের বিশ্লেষণ। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে, বিশেষ করে রাজশাহীতে বার্ষিক গড় হারে ০.৫ মিলিমিটার করে বৃষ্টি কমেছে। অন্যদিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়েছে।
বৃষ্টির এই ধারাবাহিক ঘাটতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পানির উৎস। ভূগর্ভস্থ পানির পুনঃপূর্ণতা (recharge) কমে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে ভরাট জলাধারগুলোও শুকিয়ে পড়ছে। যেমন, নওগাঁর সাপাহারে অবস্থিত জবই বিল—এক সময় যেটি ছিল কৃষি সেচের গুরুত্বপূর্ণ উৎস, এখন তা শুকনো মৌসুমে প্রায় জলশূন্য। গোয়ালা গ্রামের কৃষক আবদুস সোবহান বলেন,
“বিলে পানি থাকে না এখন। শুকনার সময় পুরোপুরি নলকূপের ওপর নির্ভর করতে হয়।”
?️ উষ্ণতা বাড়ছে, কৃষিতে পড়ছে সরাসরি প্রভাব:
গত শতকের আশির দশকে কৃষিতে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর সময়কাল ছিল। উচ্চফলনশীল জাত, সার- কীটনাশকের ব্যবহার, সেচব্যবস্থার বিস্তার—সব মিলিয়ে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তবে এই বিপ্লব টেকসই হয়নি। কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও একপাক্ষিক চাষাবাদ পরিবেশ ও উৎপাদনশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (হর্টিকালচার) এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন,
“আগে যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি পোকার সাথে লড়াই করতে হতো, এখন ৮০টির বেশি পোকা মোকাবিলা করতে হয়। তাপমাত্রা বাড়ছে, বৃষ্টিপাত কমছে এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে কৃষিতে।”
উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে, আর তার ফলেই পোকার উপদ্রব বেড়ে গেছে। যদিও এতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারেরও ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
? বোরো ধান উৎপাদনে নতুন চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশের মোট ধানের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে বোরো মৌসুম থেকে, যার বড় একটি অংশ উৎপন্ন হয় উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে। কিন্তু এই মৌসুমেই সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে গরম। মার্চ থেকে দেশের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং যখন গড় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে, তখন বোরো ধানে পরাগায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
উত্তরাঞ্চলে এই সময়ে তাপমাত্রা প্রায়শই ৩৫ ডিগ্রির বেশি থাকে, যার ফলে ধানে চিটা ধরার প্রবণতা বেড়ে যায়। চিটা রোধে ধানক্ষেত জলমগ্ন রাখা অপরিহার্য। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সেচ। অথচ খরায় ক্ষতবিক্ষত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে সেচ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে সেচের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফলনে।
ঢাকা সহ দেশের আট বিভাগে বর্ষাকালে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার বৃদ্ধি হয়েছে খরাপ্রবণ রাজশাহীতে, যেখানে প্রতি দশকে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে। বৃষ্টিপাত বেশি থাকা সিলেটেও একই হারেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগেও প্রতি দশকে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়েছে প্রায় ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই তথ্য উঠে এসেছে “বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণ এবং পরিবর্তনের প্রবণতা” শীর্ষক গবেষণায়, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ। এই গবেষণায় ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, দেশের শীতকালে সূর্যালোকের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমেছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে গত ৪০ বছরে সূর্যালোকের পতন সর্বোচ্চ। এরপরই সূর্যালোক কমেছে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে।
এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পানির সংকটের কারণে উত্তরের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ২০২২ সালের মার্চে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নিমঘাটু গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষক সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বোরো চাষে লাগাম টানার প্রয়াস:
উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো ধানের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থা সংকটজনক। গত কয়েক বছর ধরে বোরো চাষে নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে কিছুটা সফলতা পেয়েছে। চলতি বছর নাচোল উপজেলায় বোরো ধানের আবাদ কমিয়ে আনা হয়েছে দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালেহ আকরামের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নাচোলে ৭ হাজার ৫১০ হেক্টরে বোরো ধান চাষ হয়েছিল, যা আগের বছরের ৯ হাজার ৯০০ হেক্টরের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ কম। তবে এর বদলে মসুর ও ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে:
সম্প্রতি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায়, যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষক মো. সারোয়ার হোসেন নেতৃত্ব দিয়েছেন। গবেষণার ফলাফল অনুসারে, বর্তমান কৃষি পদ্ধতি অব্যাহত থাকলে সাময়িকভাবে খাদ্য উৎপাদন বেড়েও যেতে পারে, তবে এর সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার জড়িত। এক পর্যায়ে পানিসম্পদ কমে যাওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
গবেষকরা ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছেন। দেখা গেছে, যদি তাপমাত্রা ৩.৫ থেকে ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং উজানে পানি প্রত্যাহার কিংবা বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীর প্রবাহ কমে যায়, তাহলে উত্তরাঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা প্রায় ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
অতিরিক্ত উদ্বেগজনক হলো কিছু সংকট মুহূর্ত বা ‘টিপিং পয়েন্ট’ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: তাপমাত্রা ৩.৫ ডিগ্রির বেশি বৃদ্ধি, উজানে ৩০-৫০ শতাংশ পানি প্রত্যাহার, কৃষি ভর্তুকি অর্ধেক বা পুরোপুরি কাটা, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। প্রথম আলোকে সারোয়ার হোসেন জানান, এই সব পরিস্থিতি একসঙ্গে ঘটলে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ধ্বংস হবে এবং মানুষ গভীর খাদ্য সংকটে পড়বে।
গবেষকরা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাকে কেবল ধান ও গমের উৎপাদন দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি ভর্তুকি, জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—এসবের মধ্যে এক জটিল সমন্বয় বিদ্যমান। এই সম্পর্কগুলো বোঝা ছাড়া টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই যদি সমন্বিত ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাহলে বড় ধরনের সংকট এড়ানো সম্ভব। তা না হলে আগামী কয়েক দশকে উত্তরাঞ্চল মানবিক ও অর্থনৈতিক বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে উপেক্ষিত উত্তরাঞ্চল
জলবায়ু পরিবর্তন বা এর প্রভাব নিয়ে আলোচনায় সাধারণত উপকূলীয় বা দক্ষিণাঞ্চলের কথা উঠে আসে, এমনটাই মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তাঁর মতে,
“উত্তরাঞ্চলে বিকল্প চাষাবাদ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারণ হয়েছে, যার ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন নিয়ে সেখানে তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না।”