প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন: উন্নয়নেরবঞ্চিত জনপদ ৫৪ বছর পরও অবহেলিত, উচ্ছেদ হচ্ছে গ্রাম। নদী ভাঙ্গনের মুখে ৩ গ্রাম

শফিকুল ইসলাম শরীফ, রিপোর্টার। 

নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন আজ এক অবহেলিত জনপদ। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এই ইউনিয়নের উন্নয়নের ছোঁয়া তেমনভাবে লাগেনি, উপরন্তু ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন ইউনিয়নটির ঐতিহ্যবাহী তিনটি গ্রামকে গ্রাস করার পথে।

সাতটি গ্রাম, নয়টি ওয়ার্ড এবং প্রায় ১৬ হাজার ২০০ ভোটার নিয়ে গঠিত নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন চেয়ারম্যান, নয়জন সাধারণ সদস্য এবং তিনজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন। তবে বিপুল সংখ্যক ভোটার থাকা সত্ত্বেও ইউনিয়নটির যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। চিত্রী ও চরলাপাং গ্রাম দুটি এখনো উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য মূলত নৌকার উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য গ্রামেও ভালো মানের রাস্তার অভাব প্রকট, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।

একসময় এই ইউনিয়ন ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ সমৃদ্ধ। প্রতিটি গ্রামে ছিল সাপ্তাহিক হাট-বাজার, যেখানে মহাজনদের আনাগোনা, ধানের মোকাম এবং সোনালী আঁশ পাটের রমরমা বাণিজ্য চলত। চরলাপাং, দড়িলাপাং, চিত্রী গ্রামের মতো জনবহুল এলাকাগুলো তখন স্কুল, পাঠশালা ও বাজারের কারণে প্রাণবন্ত ছিল। এই অঞ্চলের বহু গুণীজনের জন্মস্থানও এই ইউনিয়ন। চিত্রী ও চরলাপাং গ্রাম দুটিতে ছিল ঐতিহাসিক লঞ্চঘাট, যা নবীনগর থেকে ভৈরব বা নরসিংদী যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এবং এর সুনাম ছিল ব্যাপক।

কিন্তু কালের পরিবর্তনে সেই চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের ভয়াল থাবা ইউনিয়নটির ঐতিহ্যবাহী তিনটি গ্রাম – চিত্রী, চরলাপাং এবং দড়িলাপাংকে গ্রাস করতে চলেছে। নদী ভাঙ্গনের কারণে কৃষিজমি কমে আসছে, ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবিকার তাগিদে এলাকার মানুষজন এখন গ্রাম ছেড়ে শহরে বা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। নদী ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামগুলো হয়তো একদিন মানচিত্র থেকেই মুছে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তবে আশার কথা হলো, নদী ভাঙ্গন ও গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রবণতার কারণে এলাকার রাজনৈতিক আধিপত্য ও গ্রাম্য কোন্দল কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, তবে সামগ্রিকভাবে গ্রামের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। শিক্ষার হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সব মিলিয়ে, নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন আজ এক কঠিন সময় পার করছে। নদী ভাঙ্গনের হুমকি এবং দীর্ঘদিনের অবহেলা ইউনিয়নটির অস্তিত্বকে সংকটে ফেলেছে। এই অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ জরুরি। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, তাদের প্রিয় জন্মভূমি এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রামগুলো যেন নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পায় এবং উন্নয়নের আলো দেখতে পায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়