গাজায় অনাহারে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে—গত দুই দিনে ক্ষুধায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৯ শিশু ও বৃদ্ধ। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। একই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
চরম খাদ্য সংকটে ভুগতে থাকা গাজাবাসীর এই দুর্দশার মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখা গেছে, যখন তিন মাস পর সীমিত আকারে ত্রাণ ঢুকতে দিতে সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের ফলে চলতি সপ্তাহ থেকেই গাজায় দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ত্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ২০০ ট্রাকের মধ্যে ৯০টি ইতোমধ্যে গাজায় প্রবেশ করেছে। এসব ট্রাকে রয়েছে ওষুধ, আটা এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী।
তবে সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, নিরাপত্তাহীনতা, লুটপাটের আশঙ্কা এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাবে ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সময়মতো সহায়তা পৌঁছানো না গেলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজায় অনাহার ও মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা আরও গভীর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, সীমিত সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও সাধারণ মানুষ এখনো তা হাতে পাচ্ছেন না। সংগঠনটির মতে, এত কমসংখ্যক ত্রাণ পাঠানো যেন “মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানোর শামিল”, কারণ এতে ভিড়, হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলার ঝুঁকি বাড়ছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের সভাপতি ইউনিস আল-খাতিব বলেন, “আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি—এখনো কেউ ত্রাণ পাননি। কোনো বেসামরিক নাগরিকের কাছে কিছু পৌঁছায়নি। বেশিরভাগ ট্রাক এখনো কেরেম শালোম সীমান্তে অবস্থান করছে। যদিও সেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, এখনও গাজায় প্রবেশ করেনি।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “এই পরিস্থিতিতে হুড়োহুড়ি কিংবা লুটপাটের মতো ঘটনা এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে।”
গাজার চিকিৎসক ও ত্রাণকর্মীরা আগেই সতর্ক করে আসছিলেন যে, সেখানে অপুষ্টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। লোকজনের স্থানচ্যুতি, রান্নার গ্যাসের অভাবে জাতিসংঘের পরিচালিত বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বাজারে সীমিত ও দামে অপ্রাপ্ত খাদ্যপণ্য—সব মিলিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজেদ আবু রমাদান জানিয়েছেন, “মাত্র কয়েকদিনেই আমরা অন্তত ২৯টি শিশুকে হারিয়েছি।” পরে তিনি জানান, অনাহারে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ—উভয়েই রয়েছেন।
এদিকে, চলতি মে মাসের শুরুতে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (IPC) পূর্বাভাস দেয় যে, আগামী ১১ মাসে গাজায় ৫ বছরের নিচে প্রায় ৭১ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত হবে এবং এর মধ্যে অন্তত ১৪ হাজার ১০০ জনের অবস্থা হবে চরম সংকটজনক।
এ পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, গাজায় শুধু যুদ্ধ নয়, তীব্র খাদ্য সংকটও ধীরে ধীরে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই মানবিক বিপর্যয় রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।