প্রকাশিত : ০৩ মে, ২০২৫, ০৪:৩৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নোয়াখালীর, সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনিয়ম-দুর্নীতি, বেহাল অবস্থা

মোঃ রফিকুল ইসলাম
ক্রাইম রিপোর্টার 


নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার পৌর শহরে প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা হাসপাতাল,চলছে অনিয়ম দূর্নীতির মহা উৎসব।
কর্মকর্তা, কর্মচারীদের  যাওয়া আসার টাইম ঠিক নাই,খামখেয়ালী করে চলছে অফিস,সেবা কার্যক্রম।  ইমার্জেন্সি বিভাগে অনৈতিক ভাবে অর্থ লেনদেন করেন কর্তব্যরত কর্মকর্তা। ভর্তি ফি ২০ টাকা নিচ্ছে। কোন রশিদ নাই।ইমার্জেন্সি বিভাগে মারা মারির পুলিশ কেইস পেপার দিয়ে নিজেদের মত করে হাতিয়ে নিচ্ছে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ।হাসপাতালে স্লিপ লাইনে নারী পুরুষ ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে। স্লিপ কর্তব্যরত ব্যক্তি টেলিফোনে থাকেন ব্যস্ত।ব্লাড চেকিং সেকশনে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্স-রে মেশিনের লোক নাই, জোড়াতালি দিয়ে চলছে সেনবাগ উপজেলা  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

  প্রায় 
পৌনে চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা লক্কর-ঝক্করে

অনিয়ম ও সংকটে সেবাবঞ্চিত মানুষ
এই যেন অনিয়ম ও অভিযোগের কারখানা, দেখার কেও নেই।
 ⁠লক্কর ঝক্কর করে চলছে পোনে চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।

অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

 নোয়াখালীর এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলার পৌনে ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল। কিন্তু বর্তমানে কেবল ‘জোড়াতালি’ দিয়েই চালানো হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
৫ মাস ধরে অচল আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন।
অদ্য সকালে হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সরে জমিনে  দেখা যায়, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে পেয়ারা বেগম নামে একজন রোগীর আল্ট্রা সনোগ্রাম হয়েছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তারপর থেকে গত পাঁচ মাস ধরে অকেজো পড়ে আছে এই গুরুত্বপূর্ণ মেশিনটি। ফলে হাসপাতাল থেকে রোগীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে।
একজন রোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  বলেন, “স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ঠিক না থাকায় আমাদের বিভিন্ন ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে হয় বেশি টাকায়। সেখানে তারা তাদের ইচ্ছামতো টাকা নেয়। সরকারি হাসপাতাল থাকতে যদি বাইরে থেকেই পরীক্ষা করাব, তাহলে এই হাসপাতালে থেকে আমাদের লাভ কী?”
অপ্রতুল জনবল, কর্মকর্তা,
পৌনে চার লাখ মানুষের জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। মেডিকেল অফিসার পদে ৯ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। সিনিয়র নার্স পদে ৩০ জনের বিপরীতে আছেন ২৩ জন।

 স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সকাল ৯টার অফিস ১২টায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ড্রাইভারের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স। বাবুর্চি না থাকায় সময়মতো খাবার পায় না রোগীরা। এক্স-রে মেশিন, ইসিজি মেশিন, ডেন্টাল চিকিৎসার সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

রোগীদের দীর্ঘ লাইন, হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, ডাক্তার দেখাতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। এতো রোগী দেখতে ডাক্তাররাও হিমশিম খাচ্ছেন। আবার কোথাও ডাক্তারই নেই অথচ রোগীদের লম্বা লাইন। রাত্রিকালীন সেবা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। 
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুছ (৪৬) জানান, “আমাদের এখানে সন্ধ্যার পর কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না। গত মাসে আমার মেয়ের জ্বর হয়েছিল, ২০ কিলোমিটার দূরে শহরে নিয়ে যেতে হয়েছিল।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স বলেন, “আমরা যতটুকু পারি করি, কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়া কতটুকুই বা করা সম্ভব? অনেক সময় নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচ করে জরুরি ওষুধ কিনে দিই।”
“এই যেন অনিয়ম ও অভিযোগের কারখানা দেখার কেউ নাই”
জানা গেছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যয়ে পড়েছে। গুরুতর কোনো রোগীর সেবা তো দূরের কথা, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অনেক রোগীকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণ পাওয়া যায় না। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়েই সদরে রেফার করেন। এখানকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
সবার আর্তনাদ: “সরকার নজর দিন”
অন্য এক রোগী বলেন, “আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পায় এজন্য সরকারের কাছে দাবি আমাদের হাসপাতালের দিকে নজর দিন।”
জোড়াতালি দিয়ে চলা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি বড় সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করে। সরকারি নীতিনির্ধারক দের দ্রুত হস্তক্ষেপ না হলে, পৌনে ৪ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা আরও বিপর্যস্ত হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাদিয়া আফরোজ বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সচল করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত চিকিৎসক-সংকট কেটে যাবে।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়