ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র দেওখোলা বাজারে প্রায় শতবর্ষ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সরকারি স্থাপনা—আলিমনগর পোস্ট অফিস। ঐতিহ্যবাহী এই ডাকঘরটি একদিকে যেমন রাষ্ট্রের সম্পদ, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনসাধারণের পত্র যোগাযোগ ও ডাকসেবার অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম উত্তেজনা। সরকারি খাস জমিতে নির্মিত মসজিদের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হয়েছে দখল-বেদখলের জটিলতা, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।
জানা যায়, ফুলবাড়িয়া-ময়মনসিংহ সড়কের পূর্ব পাশে এবং কাটাখালি বাজারগামী রাস্তার সংযোগস্থলে অবস্থিত আলিমনগর পোস্ট অফিসটির বর্তমান দাগ নম্বর ২২৬ এবং খতিয়ান অনুযায়ী এটি সরকারি ১নং খাস জমি। একতলা এই কক্ষবিশিষ্ট পোস্ট অফিসটি প্রায় শত বছর ধরে এলাকার লক্ষাধিক মানুষের সেবা দিয়ে আসছে। পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কাটাখালি, মাইনর বাজার, কাতলা সেন, সুহিলা, নামা কাতলা সেন, বালিয়ান, তেলিগ্রাম, মোহাম্মদ নগর, সারুটিয়া, ইচাইল, ধানিখোলা ইত্যাদি, যেখানকার মানুষজন প্রতিদিন ডাকসেবা নিতে আসেন।
তবে এলাকার মধ্যেই অবস্থিত দেওখোলা বাজার জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মসজিদের সম্প্রসারণ কাজ শুরু করে। অভিযোগ উঠেছে, মসজিদ কমিটি রাতারাতি পোস্ট অফিস ভেঙে ফেলে সেখানে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এরই প্রেক্ষিতে ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে স্থানীয় সুশীল সমাজ পোস্ট অফিস রক্ষার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে।
পরে ৫ ফেব্রুয়ারি পোস্ট অফিস পরিদর্শক পলাশচন্দ্র ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে মসজিদ কমিটির সভাপতি, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টরা লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন, তারা পোস্ট অফিস ভাঙার বা বেদখলের চেষ্টা করবেন না। এরপর দীর্ঘদিন মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল।
তবে ৯ ফেব্রুয়ারি আবারো জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ শুরু করলে এলাকাবাসী প্রশাসনকে অবহিত করে। ১২ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম, সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেরুন নাহার ঘটনাস্থলে যান। নির্বাহী কর্মকর্তা উভয় পক্ষকে সমঝোতার ভিত্তিতে পৃথক সীমারেখা নির্ধারণ করে দেন, এবং তার মধ্যেই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেন।
প্রথমে কাজ চললেও, কয়েকদিনের মধ্যেই অভিযোগ ওঠে মসজিদ কমিটি নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে পোস্ট অফিসের উপর ঢুকে পড়ে এবং সেখানে ছাদের ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নেয়। এতে করে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সুশীল সমাজ ও স্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।
এর মাঝেই ১৩ ও ১৫ মার্চ, অফিস চলার সময়ের বাইরে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির মসজিদ কমিটির সাথে গোপন বৈঠক করেন এবং মসজিদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী একতরফাভাবে জমি মাপঝোক সম্পন্ন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পোস্ট অফিস বা আবেদনকারীদের এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী গিয়াস উদ্দিন মাস্টার ও সাইদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সার্ভেয়ারের কাছে পোস্ট অফিসের জমির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। অথচ, খতিয়ান অনুযায়ী ২২৬ নম্বর দাগে ১৯ শতাংশ সরকারি খাস খতিয়ান জমি রয়েছে। সরেজমি জানা যায় ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলাধীন ০৫নং দেওখোলা ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র দেওখোলা বাজারে ময়মনসিংহ প্রদান ডাকঘরের হিসাবাধীন আলীম নগর শাখা ডাকঘর অবস্থিত ১৯০০ শত সালে স্থাপিত এবং বর্তমানে একই স্থানে বিদ্যমান আলীম নগর শাখা ডাকঘর ( দেওখোলা মৌজা বর্তমান দাগ নং২২৬, সাবেক দাগ নং ৩১, সরকারি খাস খতিয়ান ২.৫ শতাংশ জমিতে ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে।ব্যবহৃত অফিস ভবনটি ১২৫ বছর পুরাতন ও ছোট। অফিসের ভেতরে একসাথে কয়েকজন সেবা প্রত্যাশীল জনগনকে সুষ্ঠুভাবে সেবা প্রদান করা যায় না । ডাকঘরের পার্শ্ববতী পূর্ব - দক্ষিণ দিকে একই দাগে অফিসটি সামান্য সম্প্রসারণ করাহলে এ অঞ্চলের জনগনউপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বৃত্তি পাবে। ভবনটি অতি পুরাতন হওয়া তা নতুন করে অতি জরুরী নির্মাণ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ব্যবহৃত ২.৫ শতাংশ এর স্থলে ৩ শতাংশ জমি ডাকঘরের নামে রেকর্ডে থাকলে প্রকল্প অন্তভুত করে নতুন ভবন নির্মাণ করা সম্ভব । এ ব্যাপারে উল্লেখ্য গত০২/১১/২০২৩ সালে স্মারক নং- এ১০/ আলীম নগর বিও/২০২৩ মুলে জেলা প্রশাসনের বরাবরে ৩ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার জন্য একটি আবেদন করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, মসজিদের নামে ১০৮ নং খতিয়ানে মোট ৫৩ শতাংশ জমি বিভিন্ন দাগে রেকর্ড রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি জমি আবাদি, কয়েকটি রাস্তা এবং পুকুর ছিল যা বর্তমানে ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২২৬ নম্বর দাগে মাত্র ৭ শতাংশ জমি রেকর্ড থাকলেও বাস্তবে নির্মাণাধীন মসজিদ ভবন ১৩ শতাংশ জমি দখল করে আছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জনসাধারণের প্রশ্ন—জনবহুল দেওখোলা বাজারে জনগণের চলাচলের রাস্তা সরু করে কীভাবে মসজিদ সম্প্রসারণের অনুমতি দেওয়া হলো? প্রশাসন কি আদৌ এ বিষয়ে স্বচ্ছ আচরণ করেছে? প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হয়েছে, কারণ এলাকাবাসীর দাবি, “মোটা অংকের বিনিময়ে রহস্যজনক কারণে” জেলা প্রশাসন একতরফাভাবে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে, যাতে মসজিদের নির্মাণকাজ চলমান থাকে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা। তারা দ্রুত রাষ্ট্রীয় খাস জমি উদ্ধার এবং ঐতিহ্যবাহী আলিমনগর পোস্ট অফিস রক্ষায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।