পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বলছে, অর্থনীতিকে টেকসই পথে ফিরিয়ে আনতে হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে। তাদের মতে, শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নয়—একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ও বাজারে ভারসাম্য আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
জিইডির সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সরকারের নেওয়া কয়েকটি উদ্যোগের কারণে আগামী দিনে চালের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে আছে ১৭ লাখ টন বোরো চাল সংগ্রহ, ৫ লাখ টন শুল্কমুক্ত আমদানি ও সরকারি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে সরবরাহ জোরদার করা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আগস্টে মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যেখানে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে ছিল, সেখানে বর্তমান হারকে জিইডি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিও টানা তিন মাস ধরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে স্থিতিশীল আছে—যা একসময় ছিল ১৪ শতাংশ।
চাল খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, এককভাবে চালের অবদান ছিল প্রায় ৪৮ শতাংশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকছে না। কারণ, দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্ফীতি দরিদ্র মানুষের ভোগক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, ফলে চালের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েই চলছে। তাঁর ধারণা, বাজারে আমন চাল আসা পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে দাম কমবে না। তবে আয় বৃদ্ধি ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু থাকলে ধীরে ধীরে চাপ কমতে পারে।
অর্থনীতির বহিঃ খাতের দিক থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলছে। রপ্তানি আয় ধারাবাহিকভাবে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি, জুলাইয়ে দাঁড়ায় ৪৭৭ কোটি ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও এক বছরে বেড়ে ২৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন থেকে ৩১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এতে সরকার বৈদেশিক বাণিজ্য ও ঋণ পরিশোধে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
তবে ভেতরের চিত্র ভিন্ন। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি জুনে নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে—যা ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানোর কারণে বিনিয়োগ কমেছে, ফলে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা সম্প্রসারণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে গেছে ১৩ শতাংশের ওপরে, যা রাজস্ব ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
জিইডি সতর্ক করেছে, বিনিয়োগ, রাজস্ব আহরণ ও উন্নয়ন ব্যয় বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি টেকসই থাকবে না। বহিঃ খাত শক্তিশালী হলেও অভ্যন্তরীণ খাতের ঝুঁকি কাটাতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।