প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : Tanjir Jannat Koly

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে বদলে ফেলুন জীবনযাপনের অভ্যাস

ছবি : সংগৃহীত

অক্টোবর এলেই মনে পড়ে এ মাস শুধু শরতের নয়, সচেতনতারও। এটি ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস’ একটি সময়, যখন সারা বিশ্বের মানুষ একসঙ্গে বলে ওঠে, “নিজেকে জানো, সুস্থ থাকো।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের প্রতিপাদ্যও সেই বার্তাই দেয়—

“প্রতিটি গল্প অনন্য, প্রতিটি যাত্রা মূল্যবান।”

তবুও ২০২৫ সালেও স্তন ক্যানসার নিয়ে ভয়, কুসংস্কার ও লজ্জা আমাদের সমাজে দানা বাঁধে। অথচ সচেতনতা, নিয়মিত পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। চলুন দেখি নিজেকে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়।

স্বাস্থ্যকর খাবারে দিন শুরু করুন

শরীরকে শক্ত রাখে এমন খাবারই ক্যানসার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ।

  • প্রতিদিন তাজা ফলমূল, শাকসবজি, ও কম চর্বিযুক্ত খাবার রাখুন প্লেটে।

  • প্রক্রিয়াজাত মাংস ও চিনি মেশানো পানীয় যতটা সম্ভব বাদ দিন।
    সঠিক ওজন ধরে রাখা শুধু সৌন্দর্যের নয়, সুস্থতারও প্রতীক।

শরীরচর্চায় রাখুন নিয়ম

গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ৩০–৬০ মিনিট মাঝারি থেকে উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
চিকিৎসাধীন রোগীরাও চিকিৎসকের পরামর্শে হালকা ব্যায়াম করলে উপকার পান। ব্যায়াম বাড়ায় এন্ডোরফিন, যা মন ভালো রাখে এবং ক্লান্তি দূর করে।

প্রসাধনী বাছুন সতর্কভাবে

ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা চলছে।
বিশেষ করে আন্ডারআর্ম শেভের পর এসব পণ্য ব্যবহার না করাই ভালো।
যেকোনো প্রসাধনী ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন—আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্য উভয়ের সুরক্ষায়।

মানসিক দৃঢ়তাই আসল শক্তি

স্তন ক্যানসার ধরা পড়লে ভয় নয়, প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা শুরু করুন।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, পছন্দের কাজ করুন এগুলো শরীরে “ভালো লাগা” হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত রাখে।

নিয়মিত স্ক্রিনিং খুব জরুরি

যদি পরিবারের কারও স্তন ক্যানসার থাকে, তাহলে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

  • নিজে পরীক্ষা করুন: মাসিকের ৫–৭ দিন পর মাসে একবার।

  • চিকিৎসকের পরীক্ষা: ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি ৩ বছর পর।

  • ম্যামোগ্রাম: ৪০-এর পর প্রতি ১–২ বছরে একবার।
    আগে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ ও কার্যকর হয়।

প্রতিরোধের সহজ উপায়

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।

  • ফল ও শাকসবজি বেশি খান।

  • ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন।

  • সন্তান জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়ান।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।

যাদের ঝুঁকি বেশি

  • বয়স ৪০-এর পর নারীরা।

  • পরিবারের কারও স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে।

  • দীর্ঘদিন হরমোন ব্যবহার করলে।

  • অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাসে যারা ভুগছেন।

  • ধূমপান, মদ্যপান বা সন্তান জন্ম দেরিতে নেওয়ার কারণে ঝুঁকি বাড়ে।

সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন

রোগ ধরা পড়লে রোগী একা হয়ে পড়েন সেখানে পরিবারের ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় ওষুধ।
সহানুভূতি, কাউন্সেলিং ও মানসিক সাপোর্ট রোগীকে ভেতর থেকে লড়াইয়ের শক্তি দেয়।

মনে রাখবেন: স্তন ক্যানসার এখন আর মৃত্যুদণ্ড নয় যদি সময়মতো ধরা পড়ে, চিকিৎসা ও ভালোবাসা মিললে সুস্থ জীবন সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়