প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:২২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পহেলা মে : শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদার দিন আজ

মাসুম বিল্লাহঃ

পৃথিবীর ইতিহাসে কিছু দিন মানবাধিকারের মাইলফলক হিসেবে পরিচিত। পহেলা মে (১লা মে) এমনই একটি দিন, যা আন্তর্জাতিকভাবে শ্রমিক দিবস (International Workers' Day) বা মে দিবস নামে পরিচিত। দিনটি বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সম্মান প্রদানের প্রতীক।

মে দিবসের সূচনা হয় ১৮৮৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। তখন শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
১৮৮৬ সালের ১ মে বিশাল ধর্মঘট ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ৩ মে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন। ৪ মে হে মার্কেট স্কয়ারে প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে বোমা বিস্ফোরণ হয় ও পুলিশের গুলিতে আরও শ্রমিক প্রাণ হারান।
এই ঘটনার পর চারজন শ্রমিক নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই রক্তাক্ত ইতিহাস থেকেই পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

বাংলাদেশে পহেলা মে সরকারিভাবে ছুটির দিন এবং জাতীয়ভাবে পালন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন র‍্যালি, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করে।
দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়।

১। শ্রমিকদের অধিকার : এই দিনটি শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে।
২। ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস : শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম এবং ৮ ঘণ্টা অবসরের দাবি থেকে এ আন্দোলনের সূচনা।
৩। শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক : পারস্পরিক সম্মান ও ন্যায্যতা ভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি উপলক্ষ হয়ে ওঠে এ দিন।
৪। বৈশ্বিক সংহতি : পহেলা মে বিশ্বের সকল শ্রমিকদের ঐক্যের প্রতীক, যা ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর ভেদাভেদ অতিক্রম করে।

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির বিকাশ ও গ্লোবালাইজেশনের যুগে শ্রমিকদের চ্যালেঞ্জ ভিন্ন রূপ নিচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক কাজ, ওভারটাইম, শ্রমিক শোষণ এবং নিরাপত্তাহীন কর্মপরিবেশ এখনো বাস্তবতা।
ডিজিটাল যুগেও শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে, কারণ গার্মেন্টস, নির্মাণ ও পরিবহন খাতে আজও অনেকে বঞ্চিত।

পহেলা মে শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি চেতনার নাম—শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক। এই দিনে আমাদের শপথ হোক, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে এমন একটি সমাজ গড়ব যেখানে শ্রমিকরা পাবেন তাদের ন্যায্য অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়