প্রকাশিত : ১৬ জুন, ২০২৫, ০৭:৫৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈদের পর কমেছে মুরগির দাম, বাজারে ক্রেতা সংকট

ঈদুল আজহার ছুটির পর রাজধানীর বাজারে এখনো ক্রেতার উপস্থিতি কম। একই সঙ্গে বেশির ভাগ পরিবারের ঘরেই কোরবানির মাংস থাকায় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে বাজারে মুরগির দামও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। অর্থাৎ, ঈদের আগে ও পরের ব্যবধানে মুরগির দাম কমেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে এখনো অনেকে ঢাকায় ফেরেননি। আবার যারা ফিরেছেন, তাদের ঘরেই কোরবানির মাংস থাকায় বাজারে মুরগির চাহিদা খুব কম। এজন্য বাধ্য হয়েই সীমিত লাভে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে শহরে মানুষের উপস্থিতি বাড়লে এবং কোরবানির মাংস শেষ হলে মুরগির চাহিদা ও দাম উভয়ই আবার বাড়তে পারে।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে মুরগির দাম বেশ স্থিতিশীল ছিল। তবে ঈদের ছুটির সময়ে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে সেই দাম অনেকটাই কমে এসেছে। গত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির কেজিপ্রতি দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
আজ সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের মুরগির দোকানগুলোতে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে একসঙ্গে কয়েক কেজি কিনলে বিক্রেতারা প্রতি কেজি ১৫০ টাকায়ও মুরগি দিচ্ছেন। অন্যদিকে, কারওয়ান বাজারে কোনো ধরনের দর-কষাকষি ছাড়াই ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাত্র চার দিন আগে এই মুরগি প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পতন ঘটেছে। আজ রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা এবং হাইব্রিড জাতের সোনালি মুরগি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাত্র চার-পাঁচ দিন আগেও সোনালি মুরগির দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি।

মুরগির দাম কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মিজানুর রহমান নামের এক ক্রেতা রোববার ফেসবুকে লেখেন, ‘বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ টাকা কেজি দেখলাম। এটা কি কোরবানির ঈদের প্রভাব, না কি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার ফল?’

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে মুরগি কিনতে আসা খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। এখন হঠাৎ ১৫০ টাকায় পেয়ে যাচ্ছি, বিষয়টা আশ্চর্যই লাগছে।’

বিক্রেতাদের ভাষ্য, ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে অনেকেই এখনও ফেরেননি। পাশাপাশি কোরবানির মাংস এখনো অনেক পরিবারে রয়েছে, ফলে বাজারে মুরগির চাহিদা কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে বিক্রি, যার প্রভাব পড়েছে দামে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিক্রেতা আরশাদ মিয়াজি জানান, তিনি গতকাল ও আজ প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০–১৪৫ টাকায় কিনে ১৫০–১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, “সাধারণ সময়ে এই মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি করতাম।” আগে প্রতিদিন ১৫০–২০০টি মুরগি বিক্রি করলেও এখন সে সংখ্যা নেমে এসেছে ৬০–৭০টিতে। তাই ক্রেতা পেলেই বিক্রি করছেন।

মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামেও সামান্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। বাজারে প্রতি ডজন ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০–১২৫ টাকায়, যা আগের তুলনায় ৫ টাকা কম।

দাম কমার তালিকায় রয়েছে গরু, খাসি ও ইলিশ মাছও। কোরবানির পর বাজারে গরুর মাংসের চাহিদা তেমন নেই। বেশির ভাগ মাংসের দোকানই বন্ধ রয়েছে। কিছু খোলা দোকান মূলত অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহ করছে পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে খাসির মাংস বিক্রিতেও।

চাহিদা কম থাকায় গরু ও খাসির মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১,০০০–১,১০০ টাকায় এবং গরুর মাংস ৭০০–৮০০ টাকায়।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খাসির মাংস বিক্রেতা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, “কোরবানির পর এই সময়ে গরু-খাসির মাংসের চাহিদা কমে যায়, তাই আমরাও লাভ কমিয়ে বিক্রি করছি।”

বাজারে ইলিশ মাছের দামও কমেছে ঈদের আগের তুলনায়। এখন ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,৪০০ থেকে ১,৬০০ টাকায়, যা কেজিপ্রতি ২০০–৪০০ টাকা কম। বিক্রেতারা বলছেন, গ্রাহক কম, আর সরবরাহ বেশি থাকায় বাধ্য হয়ে দাম কমিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য চাষের মাছের দাম তেমন পরিবর্তন হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়