মো:ওসমান গণী,শিবগঞ্জ উপজেলা (বগুড়া)
বগুড়ার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় সাধু-সন্নাসীদের এক বিশেষ মিলনমেলা। এই আয়োজনে জড়ো হন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা জটাধারী সন্ন্যাসী, সাধু-সন্ন্যাসিনী ও পথের ফকিররা। হাজারো সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষও এদিন মাজার জিয়ারত করতে ছুটে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা ও মাজার ওরস।
মহাস্থান গড়ের প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়া এই মেলা বছরের পর বছর ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হবে আজ। তবে নানা ধর্মীয় ও লোকজ সংস্কৃতির আবহের মাঝেই এখানে গড়ে উঠেছে কিছু অপসংস্কৃতিরও স্থায়ী আসন। বিশেষ করে ওরস উপলক্ষে আগতদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই গাঁজা সেবনের রেওয়াজ চলে আসছে। এবার প্রশাসন বলছে, সে চিত্র পাল্টে যাবে।
মাজার মসজিদ কমিটির তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই ওরসে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি, মাজার চত্বর ও আশপাশের এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। সেখানে শিশুদের খেলনা, খাবার, শীতল পাটি, বাঁশি, মাটির তৈরি পণ্যসহ নানা লোকজ সামগ্রী বিক্রি হয়।
মহাস্থান গড়ের এই বার্ষিক ওরসের মূল আবেদন আধ্যাত্মিক। কিন্তু একে ঘিরে যাতে কোনো অসামাজিক চর্চা, বিশৃঙ্খলা বা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড গড়ে না ওঠে, সেজন্য ধর্মীয় নেতারা আগেই আহ্বান জানিয়েছেন ভক্ত ও আগতদের সতর্ক থাকার জন্য।
মাজার এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি দেখার জন্য বুধবার সরজমিনে পরিদর্শনে আসেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মোঃ জিদান আল মুসা (পিপিএম)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউর রহমান, শিবগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ শাহিনুজ্জামান, মহাস্থান মাজার মসজিদ কমিটির যুগ্ন সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম,সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা এইচ এম রবিউল করিমসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাবৃন্দ। মাজার ও মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে ডেকোরেশন করে সাজানো হয়েছে।
সারারাত ব্যাপী মাজার মসজিদ জিয়ারতকারী মুসল্লিগন বয়ান শুনবে ও এবাদত করবে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জটাধারী বাউল সন্ন্যাসীরা মাজারের আশেপাশে আস্তানা বানিয়ে নারী পুরুষ সারা রাত ব্যাপি একসাথে বাদ্যের তালে তালে নেচে গেয়ে রাত্রি যাপন করবে। মেলায় সন্ধ্যার পর থেকে মানুষের ঢল নামবে। মেলায় অস্থায়ী হোটেল কটকটি মিষ্টির দোকান সহ বিভিন্ন ধরনের শত শত দোকান বসেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে বাসা ভাড়া নিয়েছে। গত সোমবার শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী পরিদর্শনে এসে সন্দেহ মূলক কয়েকটি বাড়ি বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ভাড়া দেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন।