প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:২৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দোয়া কীভাবে করতে হয়

আল্লাহ-তায়ালার কাছে কেউ যদি দোয়া করে, তাহলে তিনি শোনেন এবং সাড়া দেন। তিনি মহানবীকে (সা.) বলেছেন, ‘যদি আমার বান্দারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন (আপনি বলুন), ‘আমি তো কাছেই আছি। প্রার্থনা করলে আমি প্রার্থনা কবুল করি। তাই তারা যেন আমার আদেশ মানে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)

কিন্তু কীভাবে আমরা তার কাছে দোয়া করব? তিনি নিজেই সে-বিষয়ে জানান, ‘তোমরা আপন প্রতিপালককে ডাকো মিনতি করে ও চুপে চুপে। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আারাফ, আয়াত: ৫৫)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিরত থাকে, তারা শিগগিরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৬০)

দোয়া একটি ইবাদত

নোমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া হলো ইবাদত। তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি ডাকে সাড়া দেবো’।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৭৯; সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৯৬৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮২৮)

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে সম্মানীয় কিছু নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮২৯)

দোয়া কীভাবে করতে হবে

প্রতিটি ইবাদতের মতো দোয়া করারও একটি পদ্ধতি আছে। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সঠিক পদ্ধতিতে দোয়া করা জরুরি। দোয়ার মধ্যে কী কী বিষয় লক্ষণীয়, সে-সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

প্রার্থনায় জোর দেওয়া: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে,, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আল্লাহর কাছে কিছু চায়, সে যেন প্রত্যয়ের সঙ্গে চায়। এভাবে যেন না চায় যে, ‘আল্লাহ, তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে কিছু দাও।’ কারণ, এটা তার পছন্দ নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৩৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৭৮)

খাবার হালাল হওয়া: আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) এক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, ‘দীর্ঘ সফরের কারণে সে ধূলিমাখা হয়ে আছে। প্রতিপালককে হাত তুলে সে ডাকে ‘হে আমার প্রতিপালক’ ‘হে আমার প্রতিপালক’। অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাকও হারাম। হারামের দিয়ে তার সামগ্রিক পাথেয় তৈরি। তাহলে কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,০১৫)

দ্রুত কবুলের কামনা না করা:

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ কেউ বলে, দোয়া করেছি কিন্তু কবুল হয় নি। তোমাদের যে কারও দোয়া কবুল করা হবে, যখন সে কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪০)

দোয়ায় বারবার মিনতি করা: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন দোয়া করতেন, তিনবার করতেন। আর যখন কোনো কিছু চাইতেন তিনবার চাইতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৭৯৪)

ব্যাপকার্থক দোয়া:

আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ব্যাপকার্থ দোয়া পছন্দ করতেন, অন্য (সংকীর্ণ অর্থবোধক) দোয়া করতেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৮২)

দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সামনে বান্দার আনুগত্য প্রকাশ পায়। দুশ্চিন্তার সময় সে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চায়। কারণ, বান্দার উপকার কিংবা ক্ষতি থেকে নিষ্কৃতি সবকিছুর ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে। এভাবে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে তার যাবতীয় প্রয়োজনের বিষয়ে আশ্রয় চেয়ে নিজেকে নিরাপদ বোধ করে। এটাই হলো দাসত্ব ও ইবাদতের মূল কথা। রাসুল (সা.) প্রচুর পরিমাণে দোয়া করতেন। আজানের পরে, নামাজের পরে ও খুতবাতে, এমনকি নামাজের ভেতরেও দোয়া করাকে তিনি নিজের রীতি বানিয়ে নিয়েছিলেন। আমরা কোনো অবস্থাতেই দোয়া পরিত্যাগ করতে পারি না, এক দিনের জন্যও না। কারণ, প্রতিটি মুহূর্তে প্রত্যেক কাজে আমরা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়