মাসুম বিল্লাহঃ
বাংলাদেশে আর কোনো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না—এমন সুপারিশ করা হয়েছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে। কমিশন বলছে, এখন থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ই-মেইলের মাধ্যমে ওষুধ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হবে চিকিৎসকদের কাছে।
স্বাস্থ্যসেবায় স্বচ্ছতা ও রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের নানা সুবিধা বা উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে চাপ দেন। ফলে রোগীরা অনেক সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দামি ওষুধ কিনতে বাধ্য হন। এটি রোগীর উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে এবং চিকিৎসার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলে।
সোমবার (৫ মে) সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হয়। এই কমিশনটি ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর গঠন করা হয়েছিল। কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান। কমিশনের বাকি সদস্যরা ছিলেন দেশের খ্যাতনামা চিকিৎসক, স্বাস্থ্য গবেষক ও সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও দক্ষ ও জনবান্ধব করতে হলে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠন জরুরি। সেইসঙ্গে কমিশন আরও সাতটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে। এসব আইনের মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, হেলথ সার্ভিস আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন, অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কমিশনার আইন এবং মেডিকেল রিসার্চ কমিশনার আইন।
কমিশনের মতে, এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। চিকিৎসকরা পেশাগতভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন, রোগীরা সঠিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবেন এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওপর থাকবে জবাবদিহিতার চাপ। ফলে সার্বিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যখাত আরও সুসংগঠিত ও সেবামুখী হবে।