মাসুম বিল্লাহঃ
যুক্তরাজ্যে দিন দিন বাড়ছে চুরি, ছিনতাই আর সহিংসতার ঘটনা। সম্প্রতি অপিনিয়াম রিসার্চ পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে প্রতি চারজন ব্রিটিশ নাগরিকের একজন নিজ চোখে দোকানপাটে লুটপাট দেখেছেন। দোকানের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে।
বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সুত্রে জানা যায়, এসব লুটপাটের অন্তত ৭০টি ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। জীবনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এসব অপরাধ বাড়ছে। এমপিরা সতর্ক করেছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী মাসগুলোতে ব্রিটেনের কারাগারগুলো অপরাধীতে ঠাসা থাকবে। নতুন দণ্ডপ্রাপ্তদের রাখার মতো জায়গা পর্যন্ত থাকবে না।
এদিকে ব্রিটেনের অর্থনীতি আরও দুর্বল হচ্ছে। দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.১ শতাংশ।
গার্ডিয়ান আরও জানিয়েছে, সরকারের নানা আশ্বাসের পরও এই প্রবৃদ্ধি হতাশাজনক। অনেকেই বলছেন, দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে আরও পিছিয়ে পড়ছে।
এদিকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে (এনএইচএস) বড় পরিবর্তন আনা হবে। এতে খরচ কিছুটা কমলেও, প্রায় ৯ হাজার কর্মীর চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো। তারা বলছে, এতে স্বাস্থ্যসেবার মান কমে যাবে এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে।
একইসাথে উচ্চ ভাড়া, মুদ্রাস্ফীতি আর কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় ব্রিটেনে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্কাই নিউজ জানিয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় এখন ইংল্যান্ডে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ২১ শতাংশ বেড়েছে।
শেল্টার ইন দ্য ইউকে জানিয়েছে, বর্তমানে ব্রিটেনে ৩৫৪,০০০ এর বেশি মানুষ গৃহহীন। তাদের মধ্যে ১,৬১,০০০ শিশু রয়েছে, যারা রাস্তার পাশে কিংবা সেতুর নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হয়েও ব্রিটেনের এই অবস্থা অনেকেরই বিস্ময়ের কারণ।
অপরাধ, বেকারত্ব আর গৃহহীনতার মতো বড় সংকটের মুখে পড়েছে ব্রিটেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশের মানুষ এখন আশায় তাকিয়ে আছে—কবে এই দুঃসময় কাটবে? ব্রিটেন কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।