তাহের তারেকঃ
সচেতনতা একটি জাগ্রত শক্তি যা কেবল মানুষকে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে। তবে সর্বক্ষণিক কারো পক্ষে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই দুই ধরনের চেতনাই আমাদের ভেতরে রহিত থাকে। অবচেতনা মন ও চেতনা মন। অবচেতন মনকে যদি সৈন্যের তালিকায় দেখি তাহলে চেতন মন অবশ্যই সেনাপতি হবে। কারন সেনাপতির নির্দেশে সৈন্যরা দায়িত্ব পালন করে থাকে।
আমাদের ক্রমাগত অভ্যাস ও ক্রিয়াকলাপই অবচেতন মনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ, আমরা যে কাজটি ক্রমাগত নিয়মিতভাবে সম্পাদন করে থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক সে কাজটিকে তার মেমরিতে সেইভ বা সঞ্চিত করে নেয়। এর ফলে সেই কাজটি আমরা কোনো বাড়তি চিন্তা কিংবা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের অজান্তে করে থাকি।
যেমন ধরুন, আপনি প্রতিদিন বাসায় ঢুকে সুইচ অন করে আলো জ্বালান। যেহেতু এ কাজটি নিয়মিতভাবে করে থাকেন, সেহেতু বাসায় ঢুকে মনে করতে হয়না যে সুইচ অন করতে হবে, বরঞ্চ হাত স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সে সুইচে চলে যায়। এমনকি যদি আলো জ্বালানোও থাকে তারপরেও আপনি সুইচটিতে চাপ দিয়ে আলো নিভিয়ে দিচ্ছেন। কারণ শুরুতেই অবচেতন মন ধারণা করে নেয়, সুইচ বন্ধ করা, সুতরাং আলো জ্বালাতে হবে। কিন্তু অন করা সুইচ যখন অফ করা হয়, তখন চেতন মন স্বয়ংক্রিয় হয়ে ব্রেইনে সিগন্যাল প্রেরণ করে যে, না সুইচ অফ করা হয়েছে আবার জ্বালাতে হবে।
ড্যানিয়েল কানেম্যানের একটা বই রয়েছে, "থিঙ্কিং, ফার্স্ট এন্ড স্লো" বইতে দুই ধরনের মস্তিষ্কপ্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, সিস্টেম ১ এবং সিস্টেম ২। সিস্টেম ১ হচ্ছে যা আমাদের অবচেতন মন করে থাকে, আর সিস্টেম ২ হচ্ছে যা আমাদের চেতন মন করে থাকে। যে কাজগুলো করতে মস্তিষ্কের অতিরিক্ত শক্তি বা চিন্তার প্রয়োজন হয়না, তা-ই হচ্ছে সিস্টেম ১। আর সিস্টেম ২ হচ্ছে যা চিন্তা করতে মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত সময়, শক্তি ও চিন্তা করতে হয়। যেমন যদি আপনাকে বলা হয় "২০+২০" কত, আপনি খুব সহজে বলতে পারবেন, যেখানে সিস্টেম ১ কাজ করে। কিন্তু যদি বলা হয় "২৭+২৯" কত তাহলে একটু হলেও বেশি চিন্তা করতে হচ্ছে এবং এটাই হচ্ছে সিস্টেম ২। তবে সিস্টেম ২-কে অনুশীলনের মাধ্যমে সিস্টেম ১-এও রূপান্তর করা সম্ভব। আর অনুশীলনের ফলেই চেতন মনকে অবচেতন মনে রূপান্তর করা সম্ভব।
মোদ্দা কথা হল আমরা এখন কোন কষ্ট করে কিছু অর্জন করতে চায় না সহজেই যেটা পাই এটা ধরার চেষ্টা করি। এতেই বাদে বিপত্তি অবচেতন মনেই কর্ম করতে অভ্যস্ত,চেতনা মন দ্বারা নিজেকে পরিচালনা করা প্রয়োজন।