অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।”
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মৎস্য ভবন ও কাকরাইল মোড়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সন্ধ্যায় সেখানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ইশরাক।
তিনি বলেন, “আদালতের রায়ের পরও আমাকে এখনো শপথ নিতে দেওয়া হয়নি। আজকের আন্দোলনটি কোনো ক্ষমতা বা পদ পাওয়ার জন্য নয়। এটি একটি বৃহৎ লড়াই—যার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে, এ বছরের ডিসেম্বরে আমরা একটি জাতীয় নির্বাচন পাব কি না, যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এবং সঠিক গণনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা পাবে।”
ইশরাক অভিযোগ করেন, দুই উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের কারণেই তাঁকে শপথ নিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের অধিকারী, কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকারের ভেতরে নতুন দলের কিছু সদস্য রয়ে গেছেন। আমরা সেই দলটির প্রতি আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে, তাদের দুজন উপদেষ্টা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছেন, যা নিরপেক্ষতার পরিপন্থী।”
চলমান আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে ইশরাক বলেন, “এটি এখন আর কেবল ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের মৌলিক প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কীভাবে এই অবস্থা সংশোধন করবে এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে।”
দুই উপদেষ্টার প্রতি ব্যক্তিগত কোনো বিরাগ নেই বলেও জানান ইশরাক। তিনি বলেন, “আমার তাদের সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত পরিচয়, বিরোধ বা শত্রুতা নেই। আমি শুধু বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষায় রাজপথে নেমেছি। আমি তাঁদের শুভকামনা জানাই। তারা পদত্যাগ করে যদি রাজনৈতিক দলে সক্রিয় হতে চান, তবে সেখানে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করুক।”
সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। এরপর তিনি আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করে এবং তাপস শপথ নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
তবে ভোটে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফল বাতিল চেয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে মামলা করেন।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৯ আগস্ট দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাকের দায়ের করা মামলার রায় দেন। রায়ে শেখ ফজলে নূর তাপসের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণা করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এই রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। পরে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়।
তবে চিঠি পাঠানোর পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ইশরাকের সমর্থকেরা ১৪ মে থেকে নগরভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।