প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:৪৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কানে পুঁজ হলে কী করব?

মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হলো—বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। যদি কানের ভিতর থেকে পুঁজ বা পানি বের হতে থাকে, তাহলে তা সাধারণত মধ্যকর্ণের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। এই অবস্থাটিকে সাধারণভাবে আমরা "কান পাকা" বলে থাকি। এটি যেকোনো বয়সেই হতে পারে, তবে আমাদের দেশে শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। এছাড়া শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকাগুলোর মানুষের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশি লক্ষ্য করা যায়, যার পেছনে রয়েছে নানা ধরনের কারণ।

কান দিয়ে পুঁজ বা পানি কেন পড়ে?
আমাদের সবার মাথার খুলির ভেতরে একটি নল থাকে, যার নাম ইউস্টেশিয়ান টিউব। এই নলের এক মাথা যুক্ত থাকে কানের মাঝের অংশে (মধ্যকর্ণে), আর অন্য মাথা গিয়ে মেশে নাকের পেছনের একটি জায়গায়, যাকে বলে ন্যাজোফেরিংস।

শিশুদের ইউস্টেশিয়ান টিউব বড়দের তুলনায় খাটো, চওড়া ও বেশ সোজা হয়ে থাকে। তাই যখন শিশুদের বুকের দুধ, বোতলের দুধ বা অন্য কোনো তরল খাওয়ানো হয়, তখন যদি তাদের মাথা সোজা না রেখে নিচের দিকে রাখা হয়, তাহলে সেই তরল সামান্য হলেও মধ্যকর্ণে ঢুকে যেতে পারে। এতে করে মাঝের কানে সংক্রমণ হয়ে "কান পাকা" রোগ দেখা দিতে পারে।

যেসব শিশু বারবার সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা, টনসিলের সমস্যা বা সাইনোসাইটিসে ভোগে, কিংবা যাদের অ্যাডিনয়েড (নাকের পেছনের টনসিলের মতো একটি অঙ্গ) বড় হয়, তাদের ইউস্টেশিয়ান টিউব ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এ কারণে কানে হঠাৎ ব্যথা, জ্বর হয়, তারপর কানের পর্দা ফেটে পানি বা পুঁজ বের হতে থাকে। যদি তখন সঠিক চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে কানের পর্দায় স্থায়ী ছিদ্র হয়ে যায়। পরবর্তীতে বারবার সংক্রমণ হলেই কান দিয়ে আবার পুঁজ বা পানি পড়তে শুরু করে। এই সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে বড়দের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে।
এছাড়া, কোনো আঘাতে কানের পর্দা ফেটে গেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না নিলে, পরবর্তী সময়ে সাধারণ সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথার সময়েও পর্দা দুর্বল হয়ে কান দিয়ে পুঁজ বা পানি পড়তে পারে।

কান পাকার লক্ষণগুলো কী কী?

.কান দিয়ে পুঁজ বা তরল বের হওয়া
কান পাকার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো কান দিয়ে পুঁজ বা পানি বের হওয়া। এই তরল কখনও দুর্গন্ধযুক্ত, কখনও আবার গন্ধহীন হতে পারে। অনেক সময় এতে রক্তও মিশে থাকতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, কান কিছুদিন শুকনা থাকে, আবার কিছুদিন পরপর পুঁজ বা পানি বের হয়। আবার এমনও হয়, যখন কান কখনোই শুকায় না সবসময়ই কিছু না কিছু তরল বের হয়।
২. কানে কম শোনা ও ভারী লাগা
কান পাকা হলে শুনতে সমস্যা হতে পারে। কানে বন্ধ বন্ধ অনুভূত হয় এবং সবসময় এক ধরনের অস্বস্তি লাগে।
৩. শোঁ শোঁ শব্দ, মাথা ঘোরা ও ভারসাম্য হারানো
অনেক সময় কানের ভেতরে বা মাথার মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। কারও কারও মাথা ঘোরে এবং চলাফেরায় ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হয়।
৪. কানে তীব্র ব্যথা ও জ্বর
কখনো হঠাৎ সংক্রমণ হলে কানে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, সঙ্গে জ্বরও আসে। এটা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

কান পাকা রোগের চিকিৎসা:

যদি কান দিয়ে অনেক পুঁজ পড়ে এবং কান পাকার অন্যান্য লক্ষণ থাকে, তাহলে চিকিৎসায় সাধারণত নিচের ওষুধগুলো দেওয়া হয়:

  • মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক
  • কানে দেওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ
  • বয়স অনুযায়ী নাকের ড্রপ ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ

পাশাপাশি কিছু নিয়ম অবশ্যই মানতে হয়:

  • ডুব দিয়ে গোসল করা বা সাঁতার কাটা একেবারেই নিষেধ।
  • গোসলের সময় কানে ইয়ারপ্লাগ অথবা নারিকেল তেল ভেজানো তুলা ব্যবহার করতে হবে।
  • ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ফ্রিজের পানি, বরফ, আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অযথা কান পরিষ্কার করা যাবে না।
  • বিশেষ করে মোরগের পাখনা, কচুর ডগা, ম্যাচের কাঠি, কলমের ঢাকনা ইত্যাদি দিয়ে কানে খোঁচাখুঁচি করা একেবারে নিষিদ্ধ।

চিকিৎসায় ভালো না হলে কী করতে হয়?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই চিকিৎসায় কানের সংক্রমণ ভালো হয়ে যায় এবং কানের পর্দার ছিদ্র নিজে থেকেই মেরামত হয়ে যায়।
তবে যদি পর্দার ছিদ্রটি বড় হয় বা বারবার পুঁজ পড়ে, তাহলে সবসময় ওষুধে কাজ হয় না  এ অবস্থায়:

  • প্রথমে ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়।
  • যদি ছিদ্র না শুকায় এবং শুনতে সমস্যা হয়, তাহলে ছোট একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কানের পর্দা ঠিক করা হয়। তবে এই অস্ত্রোপচারের আগে কান একেবারে শুকনো থাকতে হবে।
  • শুরুতেই চিকিৎসা নিলে ঝুঁকি কমে
  • কানে সংক্রমণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসা করালে কান পাকা রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 লেখক: নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়