প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:৪৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাবের পানি: সবার জন্য নয়

ছবি: ডাবের পানি

ডাবের পানি দীর্ঘদিন ধরেই "প্রাকৃতিক সুপারড্রিংক" নামে পরিচিত। এতে ক্যালরি কম, ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা বেশি এবং ব্যায়ামের পর দ্রুত শরীরকে আর্দ্র করে। ত্বকের যত্ন থেকে হজমে সহায়তা—উপকারিতা অসংখ্য। তবে সবাই সমানভাবে এই উপকার পান না। কারও কারও জন্য ডাবের পানি বরং ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিশেষ করে ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যালার্জি কিংবা ঘন ঘন সর্দি–কাশিতে ভোগেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এই পানীয় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। নিচে আলাদা করে জানানো হলো কোন পরিস্থিতিতে ডাবের পানি এড়িয়ে চলা ভালো।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কবার্তা

প্রতি ২০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে থাকে প্রায় ৬–৭ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি। তুলনায় কম হলেও এটি রক্তে শর্করার মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্লুকোজ হঠাৎ ওঠানামা করতে পারে। বাজারজাত বোতলজাত ডাবের পানিতে আবার আলাদা করে চিনি যোগ করা হয়, যা ঝুঁকি আরও বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিকদের জন্য সীমিত পরিমাণে বা চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়াই নিরাপদ।

 

অ্যালার্জি আছে যাঁদের

ডাবের অ্যালার্জি বিরল হলেও উপেক্ষা করার মতো নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে খাওয়ার পরপরই ত্বকে চুলকানি, লালচে ফুসকুড়ি বা ফোলা দেখা দিতে পারে। গুরুতর অবস্থায় শ্বাসকষ্ট বা অ্যানাফাইল্যাক্সিসের মতো প্রাণঘাতী প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। বাদামজাত খাবারে অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার।

কিডনির রোগীদের জন্য ঝুঁকি

ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। সাধারণত শরীরের জন্য এটি ভালো হলেও কিডনি দুর্বল বা সিকেডি রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমে হাইপারক্যালেমিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এতে পেশি দুর্বলতা, বমি কিংবা হৃদ্‌স্পন্দনের সমস্যা হতে পারে। তাই কিডনির অসুখ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডাবের পানি না খাওয়াই ভালো।

সর্দি-কাশি বা ফ্লুর সময়

ডাবের পানি শরীরকে শীতল রাখে। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় এর এই ঠান্ডা প্রকৃতি উল্টো ক্ষতি করতে পারে। শ্লেষ্মা বেড়ে যাওয়া, গলা ব্যথা কিংবা সর্দি দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই জ্বর বা ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগলে গরম পানীয়ই বেশি উপকারী।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা

ডাবের পানির পটাশিয়াম সাধারণত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনকারীদের জন্য এটি বিপদ ডেকে আনতে পারে। ওষুধ শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা ধরে রাখে, আর ডাবের পানি খেলে সেই মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে বুকব্যথা বা অনিয়মিত হৃদ্‌স্পন্দনের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে।

ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রিত ডায়েটে থাকলে

হৃদ্‌রোগ বা কিডনির জটিলতার কারণে যাঁদের কম ইলেকট্রোলাইটযুক্ত খাবার খেতে হয়, তাঁদের জন্যও ডাবের পানি অনুপযুক্ত হতে পারে। কারণ এতে থাকা পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ভারসাম্য নষ্ট করে সমস্যা বাড়াতে পারে।

উপসংহার

ডাবের পানি বেশির ভাগ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর শরীর আর্দ্র রাখে, পুষ্টি দেয় এবং গরমে প্রশান্তি আনে। তবে সবার ক্ষেত্রে এর উপকার সমান নয়। যদি আপনার ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যালার্জি বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে সতর্কতার সঙ্গে বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবেই ডাবের পানি খাওয়া উচিত।

সূত্র: মায়ো ক্লিনিক, এশিয়া প্যাসিফিক অ্যালার্জি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়