প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:৪১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘মগজখেকো’ আতঙ্ক: কেরালায় বাড়ছে সংক্রমণ

কেরালার মানুষ এখন নতুন এক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি। রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী সংক্রমণ—ন্যাগ্লেরিয়া ফাওলেরি, যাকে সাধারণভাবে বলা হয় ‘মগজখেকো অ্যামিবা’। ওনাম উৎসবের আগমুহূর্তে ৪৫ বছর বয়সী শোভনা নামের এক নারী এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন। মৃতদের মধ্যে রয়েছে শিশু থেকে প্রবীণ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষ।

রোগের উৎস ও ঝুঁকি:

মিষ্টি পানিতে থাকা এককোষী অ্যামিবা নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। এরপর মস্তিষ্কের কোষ খেয়ে বংশবিস্তার শুরু করে। পুকুর, নদী, অপরিষ্কার কুয়া এবং পর্যাপ্ত ক্লোরিন না দেওয়া সুইমিং পুল এ জীবাণুর প্রধান আশ্রয়স্থল। চিকিৎসা এতটাই জটিল যে অনেক ডাক্তার তাদের পুরো ক্যারিয়ারে এই রোগের রোগী কখনোই পান না।

কেরালার পদক্ষেপ :

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কেরালা সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে—

  • ২৭ লাখ কুয়া ক্লোরিন দিয়ে পরিষ্কার করা
  • পুকুরে গোসল বা সাঁতার বন্ধে সতর্কতামূলক বোর্ড বসানো
  • সুইমিং পুল ও ট্যাংক নিয়মিত ক্লোরিনেশনের নির্দেশ
  • জনসচেতনতা কার্যক্রম: নাকে প্লাগ ব্যবহার, অপরিশোধিত পানি এড়িয়ে চলা এবং শিশুদের দূষিত পানির সংস্পর্শ থেকে সরিয়ে রাখা


বৈশ্বিক চিত্র :

১৯৬২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে মাত্র ৪৮৮ জনের এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুহার ভয়াবহ—৯৫ শতাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায় বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে। কেরালায়ও দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্তদের প্রায় সবাই মারা যেতেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত শনাক্তকরণ ও নতুন ওষুধ প্রয়োগে কিছু রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ছায়া :

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, দীর্ঘ গ্রীষ্ম এবং পানিদূষণ এই জীবাণুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে। কেরালার ঘটনা ভবিষ্যতে অন্য অঞ্চল ও দেশেও হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। বিরল এই রোগ হয়তো খুব শিগগির আর বিরল থাকবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়