শফিকুল ইসলাম শরীফ রিপোর্টার।
এক সময় যে কোন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু, উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের নাম ও উদ্দেশ্য তোলে ধরতে প্রয়োজন হতো চারুশিল্পীদের রঙ-তুলির আচঁড়ে হাতে লেখা পোস্টার, ব্যানার, বিজ্ঞাপন, এপিটাফ। শুধু কি অনুষ্ঠানের, দোকানপাটের নাম, স্কুল-কলেজ, বাস-ট্রাক, রিক্সা, লঞ্চের লিখনিতে চারুশিল্পীদের কদর ছিলো বেশ। বর্তমানে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ডিজিটাললাইজেশন প্যানা, পিভিসি, ইলেক্ট্রিক লাইট বোর্ড, পাথর, প্লাস্টিক ও স্টীলের কাজ জায়গা করে নিয়েছে চারুশিল্পীদের বদলে। এতে কাজ না পেয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া চারুশিল্পীদের হাতে লেখা রঙ-তুলির আচঁড়ের ব্যানার, পোস্টার, বিজ্ঞাপণ, এপিটাফ হারিয়ে যাচ্ছে।
কাপড় কিংবা টিনে হাতে লেখা চারুশিল্পীদের কাজের ধীর গতি, সময় বেশি লাগা ও গথবাঁধা ডিজাইনের বিপরিতে কম্পিউটারের গ্রাফিক্সের সাহায্যে প্যানা, পিভিসি, স্টীল, পাথর ও প্লাস্টিকের কাজে মনমতো সৌন্দর্য্য বর্ধক ডিজাইন ও সময় কম লাগার কারনে প্রযুক্তির দিকেই ছুটছে মানুষ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মতি আর্ট, ফণী আর্ট, সুচিত্র আর্ট, আমির আর্ট, জিলানি আর্ট, সৈনিক আর্ট, মদিনা আর্ট, হীরা সাইন, হিরা আর্ট, শাওন এ্যাড, মক্কা আর্ট থাকলেও এখন কোন রকমে টিকে আছে ফণী আর্ট। কেউ কাজ কমে আসায় চলে গেছেন অন্য পেশায় আবার কেউ বেছে নিয়েছেন ডিজিটালাইজেশনকে। কেউ করছেন মাঝেসাঝে।
ফণী আর্টের স্বত্তাধিকারি ফণী ভূষণ পাল জানান, এক সময় অনেক চাহিদা ছিলো, রাত-দিন কাজ করতাম। এখন বলতে গেলে কাজ নাই । সবাই ডিজিটাল প্যানা, পিভিসি, স্টিকারের কাজ করে। কোন রকমে পড়ে আছি আরকি!
আরো জানা যায়, ফণী ভূষণ পালের ছেলে সাগর পালকে শিখিয়েছেন গ্রাফিক্সের কাজ। যে কাজ করতে তার বাবার দিন লেগে যেতো সে কাজ কয়েক মিনিটের মধ্যেই করে থাকেন।
সংস্কৃতিকর্মী জাকির হোসেন জানান, আমরা আগে কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে ছুটে যেতাম মতি আর্ট কিংবা ফণী আর্টের দোকানে। কয়েকদিন আগে অর্ডার করে রাখতে হতো। কাপড়ের উপর সুন্দর হাতের অক্ষরে লেখা হতো তখন।
সিনিয়র সাংবাদিক কান্তি কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, আমাদের সময়টা এখনকার থেকে ভিন্ন রকম ছিলো। এক ব্যানার দিয়ে শুধু সাল-তারিখ পরিবর্তন করে চলতাম আমরা। এখন তো বছর বছর ব্যানার বানানো যায়। সুবিধাও বেশি, দামে কম।
প্রফেসর আশরাফুল হক জানান, চারুশিল্পীদের হাতে লেখা কাজগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। খুব সাবধানতার সাথে কাজ করে আনতে হতো। কোন ভুল হলে আবার লেখানোটা অনেক সময়ের ব্যাপার ছিলো। এখনকার জেনারেশন এই কাজ গুলো সম্পর্কে হয়তো লেখনিতে জানবে তবে এটার যে কি এক সৌন্দর্য ও সময় ছিলো তা কখনো বুঝবে না।