প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুই উপদেষ্টাকে দায়িত্ব ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই দায়িত্ব ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ না করে কিছুটা সময় চান। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এই দুই উপদেষ্টা হলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

সূত্রের তথ্যমতে, মাহফুজ আলম আপাতত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি, বরং তিনি বর্তমান দায়িত্বেই থাকতে আগ্রহী। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তাঁদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে আসিফ মাহমুদ গত ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি পদত্যাগ করবেন। আর মাহফুজ আলম গত ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, “দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তায় আছি—আমি কখন নামব, তা আমি জানি না।”

সরকারের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ছাত্র প্রতিনিধিদের একটি অংশ চান অন্তত একজন উপদেষ্টা পরিষদে থাকুক। তাঁদের ধারণা, ছাত্র উপদেষ্টা কেউ না থাকলে পরিষদের কিছু সদস্য তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাসহ ২৩ জন সদস্য, যাঁদের মধ্যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি।

প্রথমে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মো. নাহিদ ইসলাম, যিনি পরে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হন। এনসিপি গঠিত হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে।

মাহফুজ আলম শুরুতে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। ২০২৪ সালের নভেম্বরে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাঁকে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম ও যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

রাজনৈতিক মহলে ধারণা, এই দুই উপদেষ্টা এনসিপির ঘনিষ্ঠ এবং দলটির পরামর্শক হিসেবেও ভূমিকা রাখছেন। সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে তাঁদের অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা তৈরি হয়েছে।

এনসিপি নেতাদের মতে, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শুধু দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সরে যেতে বলাটা পক্ষপাতমূলক। তাঁরা এই বিষয়টি সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনাতেও তুলেছেন।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, “উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে যেসব বক্তব্য বা বিতর্ক ছড়াচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে এবং জনগণের কাছে এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে। তাই প্রধান উপদেষ্টার উচিত এখনই স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “দুই ছাত্র উপদেষ্টার হয় পদত্যাগ করা উচিত, নয়তো স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া উচিত যে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং এনসিপির সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগসূত্র নেই।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়